
ইউরিক অ্যাসিড এই নামের সাথে আমরা সবাই সুপরিচত এবং আমরা অধিকাংশই জানি ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে গেঁটে বাত হয়। কিন্তু আমরা কি জানি যে ইউরিক অ্যাসিড জিনিসটা কি? এটি কিভাবে আমাদের দেহের ক্ষতি করে? গেঁটে বাত ছাড়া আর কি কোনও রোগ হয় ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে? চলুন দেখা যাক:
গেঁটে বাত ছাড়া আর কি কোনও রোগ হয় ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে?
পিউরিন নিউক্লিওটাইড (এডেনিন এবং গুয়ানিন) ,বিপাকের ফলে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। ইউরিক অ্যাসিড প্রধানত লিভার, অন্ত্র এবং অন্যান্য টিস্যু যেমন কিডনী,পেশীতে সংশ্লেষিতহয়।ইউরিক অ্যাসিড কিডনীর গ্লোমেরুলি দ্বারা ফিল্টার হয় এবং ফিল্টার করা ইউরিক অ্যাসিডের প্রায় 90%পুনরায়শোষিতহয় এবং বাকি অংশ কিডনীর মাধ্যমে প্রতিদিন নির্গত হয়।

পাখি, সরীসৃপ, এবং বেশির ভাগ স্থলজ আর্থ্রোপড, যেমন পোকামাকড়কে ইউরিকোথেলিক জীব বলা হয় কারণ এরা ইউরিয়ার পরিবর্তে বিষাক্ত অ্যামোনিয়াকে ইউরিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে, বিপরীতে, স্তন্যপায়ী প্রাণী অ্যামোনিয়া থেকে ইউরিয়া উৎপন্ন করে এবং দেহ থেকে মুত্রের মাধ্যমে নির্গত করে।উদ্ভিদ জগতের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ একটি উৎস হল ইউরিক অ্যাসিড।বেশিরভাগ প্রানী দেহ থেকে ইউরিকঅ্যাসিড বর্জন করে, বাস্তুতন্ত্রের সাম্য বজায় রাখে।ইউরিক অ্যাসিড জলে অদ্রাব্য।পাখি, সরীসৃপএবংমরুভূমিতে বসবাসকারী প্রাণীরা তাই ইউরিক অ্যাসিডকে অর্ধ তরলপদার্থ হিসাবে নির্গত করে। স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ইউরিক অ্যাসিডকে অ্যালান্টয়েনে পরিণতকরে মুত্রের মাধ্যমে নির্গত করে। মানুষের দেহে ইউরিক অ্যাসিড থেকে যাওয়ার সাথে দীর্ঘআয়ুর একটা সম্পর্ক আছে। মানুষের দেহে ইউরেটঅক্সিডেস উৎসেচক থাকে না, এই উৎসেচক স্বল্পমেয়াদী প্রাণীদের দেহে উপস্থিত থাকে।

দেহে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমান বেড়ে গেলে তাকে হাইপারইউরিসেমিয়া বলে। হাইপারইউরিসেমিয়া মূলত দুটি কারণে হয় প্রথমত, ইউরিক অ্যাসিডের অতিরিক্ত উৎপাদন এবং পিউরিন যুক্ত খাদ্য অধিক মাত্রায় গ্রহন (মুসুর ডাল, অড়হর ডাল, বেকারি প্রোডাক্ট, ইস্ট ,পোস্ত ,চিংড়ী, মাছের মাথা, মাছের ডিম, মেটে) দ্বিতীয়ত, শরীরে ইউরিক অ্যাসিড নির্গমনের চেয়ে উৎপাদনের মাত্রা বেশী হলেও হাইপারইউরিসেমিয়া হয় যেমন ক্রনিক কিডনী ডিজিজে দেখা যায় ।

এছাড়া কিছু ওষুধের কারণেও ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ দেহে বেড়ে যায় যেমন- থায়াজাইড ডাইইউরেটিক্স প্রথম সারির অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ ওষুধ যা শুধু উচ্চ রক্তচাপ কমায় তাই নয়, স্ট্রোক এবং কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিওর হ্রাস করে, এছাড়া পাইরা জিনামাইড এবং ইথাম্বুটল যক্ষ্মা বিরোধী ওষুধ এবং লুপ ডাইইউরেটিক্স।
ফ্রুক্টোজ ভেঙে পিউরিন হয় এবং পিউরিন ভেঙে ইউরিকঅ্যাসিড তৈরি হয়। ফ্রুক্টোজ কয়েক মিনিটের মধ্যে ইউরিক এসিড তৈরি করতে পারে তাই এমন খাবার বা পানীয় গ্রহণ করবেন না যেখানে ফ্রুক্টোজ সিরাপ বা মধু ব্যাবহার করা হয়।
কিছু জিন গত কারণেও হাইপারইউরিসেমিয়া হয়, গবেষণায় দেখা গেছে দুটি জিন, SLC2A9 এবং ABCG2 ইউরেট এর মাত্রাকে সব থেকে বেশী প্রভাবিত করে।

যদি বেশ অনেকবছর ধরে হাইপারইউরিসেমিয়া থাকে, তাহলে ইউরিকঅ্যাসিড ক্রিস্টালগুলো টোপি নামে ক্লাম্প তৈরি করতে পারে।এই ক্রিস্টালগুলো ত্বকের নীচে, জয়েন্টগুলির চারপাশে এবং কানের ভাঁজে জমা হয়। ।ক্রিস্টালগুলো জয়েন্টের ব্যথা আরও খারাপ করতে পারে এবং সময়ের সাথে সাথে জয়েন্টগুলোতে ক্ষতিকরে বা আপনার স্নায়ুকে দুর্বল করে। ক্রিস্টালগুলো দেহের যে অংশে জমতে শুরু করে সেখান টা লাল হয়ে যায় এবং ব্যথা শুরু হয়। আগেকার দিনে হাইপারইউরিসেমিয়া মানে গেঁটে বাত এছাড়া আর কোন লক্ষণ হতে পারে জানা ছিল না তাই তখন অনেকেই সেটাকে গুরুত্ব দেয়নি কিন্তু এখন অনেক নতুন লক্ষণের কথা জানা গেছে এবং মানুষ আগের থেকে কিছুটা সচেতন হয়েছে ।
হাইপারইউরিসেমিয়া অনেক সময় লক্ষণবিহীন হয়, আমরা বুঝতেইপারিনা যে আমাদের দেহে ইউরিকঅ্যাসিডের পরিমান বেড়ে গেছে, যার জন্য আমরা চিকিৎসা করাই না এবং সেখান থেকে আমাদের অজান্তেই আরও আনেক রকম রোগও সৃষ্টি হয়।

যেমন- ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টালগুলো কিডনিতে জমে পাথর তৈরি করে। প্রায়শই, পাথরগুলি ছোট হয় এবং মুত্রের মাধ্যমে নির্গত হয়।কখনও কখনও, এই পাথরগুলি এত বড় হয় যে মূত্রনালীরপথ আটকে দেয়এবং মূত্রনির্গমনে বাধা দেয়। কিডনীতে পাথরহলে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা যায়-তলপেটেতীব্রব্যথা ,মুত্রে রক্তের উপস্থিতি, জ্বর , বমিবমিভাব এবং দুর্গন্ধযুক্তমুত্র। এছাড়া হাইপারইউরিসেমিয়া কার্ডিওভাসকুলারডিজিজ (CVD), যেমন করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD), স্ট্রোক এবং হাইপারটেনশনের এবং ক্রনিক কিডনী ডিজিজএর সাথেও জড়িত। বিশেষ করে হাইপারটেনসিভ রোগীদের মধ্যে । এন্ডোথেলিয়াল নিষ্ক্রিয়তা কার্ডিওভাসকুলার রোগের অন্যতম কারণ। হাইপারইউরিসেমিয়া এন্ডোথেলিয়াল নিষ্ক্রিয়তা ঘটায়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে হাইপারইউরিসেমিয়া রোগীদের টাইপ 2 ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবনতা বেশি থাকে এবং সেখান থেকে ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হাইপারইউরিসেমিয়া স্থূলতা,নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার, মেটাবলিক সিন্ড্রোম এর সাথেও জড়িত।
তাই এবার থেকে ইউরিকঅ্যাসিড রক্তে বেশী থাকলে কোনভাবেই অবহেলা করা যাবে না ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে যাতে ইউরিকঅ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে।
Call us on 03341804141 for all kind of dietary consultation and nutritional assessment.